ভূমিকা: ঈদের সকাল ও নেহারী-র শাহী উপস্থিতি
ঈদ মানেই পরিবার, ভালোবাসা, আর স্মৃতির সাথে খাবারের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। কোরবানির ঈদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটি শুরু হয় এক কাপ চা আর গরম রুমালি রুটি দিয়ে, যার পাশে যদি থাকে ধীরে আঁচে রান্না হওয়া ঘন ঝোলের নেহারী গোশত, তাহলে দিনটা হয়ে যায় সত্যিকার অর্থেই শাহী।
নেহারী মূলত উপমহাদেশীয় এক ঐতিহ্যবাহী ডিশ—যা এক সময় শুধুমাত্র নবাবদের জন্য বানানো হতো। আজ তা ঈদের সকালে গৃহিণীদের গর্ব, অতিথিদের প্রিয় আর খাবার টেবিলের রত্ন হয়ে উঠেছে।

নেহারী-র পেছনের গল্পটা কী?
‘নাহার’ শব্দটা এসেছে আরবি শব্দ ‘নাহার’- থেকে যার মানে ‘দিন’। অর্থাৎ, দিন শুরুর জন্য তৈরি বিশেষ খাবার।
পুরান ঢাকার হোটেলগুলোতে ভোর ৬টা থেকে শুরু হতো এই মাংসের ঝোলের পরিবেশন। কোরবানির ঈদে গরুর পায়া বা রান অংশ দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রাঁধা নেহারী এখন অনেক বাড়িতেই সকালবেলার ট্র্যাডিশন। চল এবার জেনে নেওয়া যাক এই ঐতিহ্যবাহী রেসিপি।
উপকরণ (Ingredients): (৮-১০ জনের জন্য)
মূল উপকরণ:
- গরুর রান বা পায়া (হাড়সহ) – ১ কেজি
- তেল – ৪ টেবিল চামচ
- ঘি – ৩ টেবিল চামচ
- পেঁয়াজ – ২ কাপ (ভাজা)
- আদা বাটা – ২ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
- টক দই – ১/২ কাপ
- হলুদ – ১/২ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
- ধনিয়া গুঁড়া – ১ টেবিল চামচ
- লবণ – স্বাদমতো
- গরম পানি – পরিমাণমতো
নেহারী মসলা (স্পেশাল মিক্স):
- দারচিনি – ২ টুকরো
- এলাচ – ৪টি
- লবঙ্গ – ৫টি
- জায়ফল – ১/২ চা চামচ
- জাওত্রী – ১/২ চা চামচ
- কালো মরিচ – ১ চা চামচ
- শুকনো মরিচ – ২টি
সব মসলা হালকা ভেজে গুঁড়া করে নাও।
নেহারী রান্নার পদ্ধতি (Cooking Instructions):
১. মাংস প্রস্তুত করা:
মাংস ভালোভাবে ধুয়ে নাও। দই, আদা-রসুন বাটা, হলুদ, মরিচ গুঁড়া, লবণ দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখো ৩০ মিনিট। এতে মাংস আরও নরম ও সুগন্ধি হবে।
২. কষানো পর্ব:
একটা বড় ও মোটা হাঁড়িতে তেল ও ঘি গরম করে নাও।এরপর ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে হালকা বাদামি হওয়া পর্যন্ত ভাজো। এবার পেঁয়াজের ভাজা অংশ ও ধনিয়া গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নাও।
৩. ধীর আঁচে রান্না:
গরম পানি ঢেলে ঢাকনা দিয়ে মিডিয়াম থেকে লো আঁচে ২–২.৫ ঘণ্টা রান্না করো। মাঝে মাঝে নেড়ে দিও যাতে লেগে না যায়। মাংস নরম হলে বুঝবে ঠিক আছে।
৪. মশলার কারিশমা:
রান্নার একদম শেষে স্পেশাল নাহারী মসলা ছড়িয়ে দাও। ঢাকনা দিয়ে আরও ১৫ মিনিট ঢেকে রাখো যেন মশলার ঘ্রাণ ঢুকে যায় মাংসে।
৫. গার্নিশ:
কাঁচা মরিচ ফালি, ধনেপাতা কুচি আর আদা কুচি ছড়িয়ে গার্নিশ করো।
নেহারী পরিবেশন টিপস (Serving Suggestions):
- নেহারী র আসল স্বাদ আসে গরম গরম খেলে।
- রুমালি রুটি, পরোটা বা খিচুড়ির সঙ্গে পরিবেশন করো।
- চাইলে পাশে একটুকরো লেবু ও পেঁয়াজ কুচি দাও—তাতে স্বাদ দ্বিগুণ!
রান্নার গুরুত্বপূর্ণ টিপস (Extra Tips):
- ধৈর্য ধরো: এই রান্নার সৌন্দর্য হলো সময়। ধীরে রান্না মানেই মাংসে ঢুকে যাবে মশলার গভীরতা।
- তেল-ঘি আলাদা হয়ে আসা: এটা বোঝায় নাহারী ঠিকভাবে রান্না হয়েছে। ঝোল ঘন হলে খাবার দারুণ লাগে।
- ধোঁয়া টুইস্ট: কয়লা গরম করে ছোট বাটিতে রেখে হাঁড়ির মধ্যে বসিয়ে তার ওপর ঘি ফেলে ঢেকে রাখো—ধোঁয়ার অসাধারণ ঘ্রাণ নাহারীতে ঢুকে যাবে।
শেষ কথাঃ
নেহারী শুধুমাত্র একটা খাবার নয়, এটা ঈদের সকালে একটা আবেগ। গরুর পায়ার ঝোল যখন ধীরে ধীরে ফুটে উঠে, তখন পুরো বাড়ি ভরে যায় ঈদের ঘ্রাণে। এই রেসিপি তোমার গেস্টদের মুখে যেমন হাসি আনবে, তেমনি তোমার ব্লগ বা সোশ্যাল মিডিয়াতে আনবে প্রচুর এনগেজমেন্ট।