শীতের সকালে মায়ের হাতের সেই মিষ্টি – নারকেল গুড়ের নাড়ু রেসিপি
শীতকাল এলেই আমার মনে পড়ে সেই দিনগুলো, যখন খুব ভোরে ঠান্ডা কম্বলের নিচ থেকে উঠে আসতাম মায়ের ডাকে। রান্নাঘরে ঢুকেই গন্ধে মন ভরে যেত – গুড়ের সেই গা-জোয়ারি গন্ধ, কড়াইতে নারকেল কড়কড় শব্দে ভাজা হচ্ছে। মা বলত, “শীত না এলে এই নাড়ু বানানোর মজা কই!”
আমাদের ছোটবেলার শীত মানেই ছিল পিঠে-নাড়ুর উৎসব। পিঠে বানানোর সময় একটু ফাঁকে মা কয়েকটা নারকেল-গুড়ের নাড়ু বানিয়ে রাখত – ছোট ছোট মিষ্টি গোল বল, যা মুখে দিলেই গলে যেত। আজও সেই স্বাদ মিস করি, আর তাই এখন নিজেই বানিয়ে নিই – আগের দিনের সেই ঘ্রাণ, সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য।
নারকেল-গুড়ের নাড়ু – উপকরণ (Ingredients):
- ঘষা নারকেল – ২ কাপ (ফ্রেশ, না হলে নাড়ু শক্ত হবে)
- খেজুর গুড় – ১ কাপ (কুচি করে কাটা)
- এলাচ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
- ঘি – ১ চা চামচ (ইচ্ছেমতো)
প্রস্তুত প্রণালী (Step-by-Step Instructions):
১. নারকেল প্রস্তুতি:
তাজা নারকেল ঘষে নাও। চাইলেই বাজারে পাওয়া প্যাকেট নারকেল নিতে পারো, তবে স্বাদে পার্থক্য থাকবে। মিহি হলে নাড়ু মসৃণ হয়।
২. গুড় গলানো:
একটি ননস্টিক কড়াইতে গুড় নিয়ে মাঝারি আঁচে গলাও। চাইলে সামান্য পানি দিতে পারো যাতে পুড়ে না যায়। গুড় পুরোপুরি গলে গেলে ছোট বুদবুদি উঠবে—সেটা হলেই নারকেল মেশাতে হবে।
৩. নারকেল মেশানো:
গুড়ে ঘষা নারকেল ঢেলে দাও। এখন থেকে ৮-১০ মিনিট ধরে নাড়তে হবে। প্রথমে তরল মনে হবে, কিন্তু ধীরে ধীরে মিশ্রণটা আঠালো হয়ে আসবে। তখন বুঝবে পাক ঠিক হয়েছে।
৪. এলাচ ও ঘি:
শেষে এলাচ গুঁড়ো ছিটিয়ে দাও আর চাইলে ১ চা চামচ ঘি মিশিয়ে দাও। ঘি দিলে নাড়ুর ঘ্রাণ অনেক সুন্দর হয় এবং মুখে দিলে গলে যায়।
৫. নাড়ু তৈরি:
মিশ্রণ একটু ঠান্ডা হলে হাতে সামান্য জল বা ঘি নিয়ে গোল গোল নাড়ুর আকার দাও। খুব গরম থাকলে পুড়ে যেতে পারে, আর ঠান্ডা হয়ে গেলে শক্ত হয়ে যাবে—তাই মাঝামাঝি সময়টাই পারফেক্ট।
স্বাস্থ্য উপকারিতা (Health Benefits):
- নারকেল প্রাকৃতিক ফ্যাটে ভরপুর যা শরীরে শক্তি জোগায়
- খেজুর গুড় আয়রন ও মিনারেল সমৃদ্ধ – রক্তস্বল্পতায় ভালো
- কোনো কৃত্রিম চিনি বা প্রিজারভেটিভ নেই
- বাচ্চা থেকে বয়স্ক – সবার জন্য উপযোগী
সংরক্ষণ ও পরিবেশন:
- এই নাড়ু ঠান্ডা হয়ে গেলে Airtight বক্সে রেখে দাও
- ফ্রিজে রাখলে ৭-১০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে
- অতিথি এলে পরিবেশন করো ছোট ট্রেতে সুন্দর সাজিয়ে
টিপস & টেকনিক:
- গুড় গলানোর সময় বুদবুদি দেখা না গেলে পাক ঠিক হবে না
- নারকেল যেন একেবারে শুকনো না হয় – তাতে নাড়ু ফাটে
- চাইলে নারকেলের সাথে মাওয়া বা ক্ষীর মিশিয়ে নতুন স্বাদ আনতে পারো
শেষ কথাঃ
রান্না শুধু পেট ভরানোর জন্য নয় – এটা মনে স্মৃতি তৈরি করে। এই নারকেল-গুড়ের নাড়ু যেন আমার শৈশবের ছোট্ট একটা টুকরো। আজ যখন বানাই, তখন শুধু একটা মিষ্টি নয়, আমি যেন ফিরে যাই সেই দিনগুলোয়… মা’য়ের কণ্ঠ, কুয়াশায় মোড়া সকাল আর রান্নাঘরের উষ্ণতা।
তুমি চাইলে একবার নিজেও ট্রাই করে দেখো – হয়তো তোমারও মিষ্টি কিছু স্মৃতি জেগে উঠবে।
